Projukti Kotha

স্মার্টফোন কেনার আগে কোন বিষয়গুলো বা মোবাইল কি দেখে কেনা এবং মোবাইল ফোন কেনার  সময় এই বিষয়গুলো জেনে নিন :

বর্তমানে স্মার্টফোন বা মোবাইল কোনো বিলাসিতার পণ্য নয়।স্মার্টফোন বা মোবাইল বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এখন আমরা মোবাইল বা স্মার্টফোনের মাধ্যমেই অনেক কাজ করে থাকি। বর্তমান বাজারে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির নানা রকম মডেলের মোবাইল থাকা শর্তেও একজন ইউজার কে তাঁর জন্য কোন মোবাইলটি সঠিক হবে তা নির্ণয় একটু কষ্টসাধ্য। একজন ইউজার কে নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হয় স্থায়িত্বকাল, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, ফোনের ক্যামেরা, ফিচার, প্রসেসর, বাজেট ইত্যাদি নিয়ে। এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো যে বিষয় গুলো নিয়ে তা জানা থাকলে একটি ভালো স্মার্টফোন বা সঠিক মোবাইল আপনি খুব সহজে নির্বাচন করতে পারবেন :

মোবাইলের ডিজাইন ও ওজন :

যে কোনো জিনিসের সৌন্দর্য প্রকাশ পাই তার ডিজাইনরে মাধ্যমে।ঠিক তেমনি মোবাইলের ক্ষেত্রেও ডিজাইন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।সাধারণত মোবাইল যত বড় হয় তার ওজনও বেশি হয় আর অনেকই আছে পকেটে ভারি কিছু বহন করতে চাই না ।তাই বিভিন্ন কোম্পানির নানা রকম মডেলের মোবাইল গুলো থেকে নিজের ব্যক্তিগত রুচি এবং চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন ও ওজন পছন্দ করাই শ্রেয়।

মোবাইলের ডিসপ্লে বা পর্দার আকার :

যে কোন মোবাইল জন্যই একটি ভালো মানের ডিসপ্লে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।বর্তমান বাজারে বেশির ভাগ স্মার্টফোনের ৫-৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যায়।আপনি যদি বেশি ভিডিও দেখাতে বা গেম খেলতে পছন্দ করেন তাহলে বড় আকারের ডিসপ্লে নেওয়া উচিত ।তবে ৪.৫ থেকে ৫.৫ ইঞ্চির ছোট পর্দার মোবাইল গুলো সহজে বহন করার জন্য সুবিধাজনক।

ডিসপ্লের অ্যাসপেক্ট রেশিও :

অ্যাসপেক্ট রেশিও হচ্ছে মূলত ফোনের পর্দার আকার বা স্ক্রিন সাইজের লম্বা আর চওড়ার বিষয়টি।বর্তমানে বেশির ভাগ স্মার্টফোনের অ্যাসপেক্ট রেশিও হচ্ছে 20.9 আগে যেখানে ফোনে 16:9 অ্যাস্পেক্ট রেশিও ছিল

প্যানেল টাইপ :

বর্তমানে ফোনের প্যানেল টাইপের মধ্যেই আছে এলসিডি, টিএফটি, আইপিএস, এমোলেড, সুপার এমোলেড সহ বেশ কয়েকটি ডিসপ্লে প্যানেল।প্যানেল টাইপের উপরই ডিসপ্লের কালার সহ অন্যান্য বিষয় নির্ভর করে।এলসিডি থেকে ওলেড ডিসপ্লে প্যানেল বেশি ভালো হয় তবে স্মার্টফোনটির দামের উপরও কিছুটা প্রভাব ফেলে।ডিসপ্লে নির্বাচনের আরেকটি বিষয়রে উপর লক্ষ্য রাখা উচিত তা হলো Display PPI.

টাচ স্ক্রিন :

টাচস্ক্রীন হলো ডিসপ্লের ক্ষেত্রে আরেকটি অন্যতম বিষয়।বর্তমান তিন ধরনের টাচস্ক্রীন সমৃদ্ধ ফোন পাওয়া যায় তা হলো শুধু টাচস্ক্রীন, ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রীন এবং মাল্টি-টাচস্ক্রীন।তবে সবচেয়ে ভালো হবে মাল্টি -টাচস্ক্রীন।

প্রসেসর :

স্মার্টফোনের প্রাণ হচ্ছে প্রসেসর বা চিপসেট।আপনার স্মার্টফোনে যত বেশি শক্তিশালী প্রসেসার থাকবে আপনার ফোন তত বেশি স্মুথলি রান করবে। আর, ক্লক স্পিড, কোর সংখ্যা সহ আরো বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর একটি প্রসেসরের পারফরম্যান্স নির্ভর করে।তাই মোবাইলের ভালো পারফরম্যান্স জন্য উন্নত প্রসেসর নির্বাচন করা উচিত।

প্রসেসর এর প্রকারভেদ :

বর্তমানে স্মার্টফোনের জন্য প্রসেসর তৈরি করছে কোয়ালকম, মিডিয়াটেক ,স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অ্যাপল, ইন্টেলসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি।যদিও ব্যবহারকারী বিচারে মিডিয়াটেক এগিয়ে রয়েছে। তবে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন বর্তমানে পারফরমেন্স বিচারে কিন্ত এগিয়ে।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৬০, ৭১২,৭৩০ , ৮৩৫, ৮৪৫, ৮৫৫, ৮৬৫ ;
স্যামসাং এর এক্সিনস ৮৮৯০,৮৮৯৫, ৯৮১০, ৯৮২০,৯৮২৫ ;
মিডিয়াটেক হেলিও পি৯৫, পি৯০, পি৭০, এক্স৩০ ইত্যাদি বর্তমানে খুব ভালো মানের প্রসেসর।তবে শুধু নিজেদের স্মার্টফোনে ইউজ করতে দেখা যায় স্যামসাংয়ের এক্সিনস, হুয়াওয়ের কিরিন, অ্যাপলের প্রসেসর।
আর আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনে গেমিং বা মাল্টিটাস্কিং করতে আগ্রহী হলে ভালো মান এর একটি প্রসেসর আপনার দরকার হবে।

জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট :

চিপসেট বা প্রসেসরের পাশাপাশি জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।গেমিং পারফর্মেন্স, ফ্রেম রেট, গ্রাফিক্স সহ আরো অনেকগুলো বিষয় হ্যান্ডেল করে জিপিইউ ।বর্তমানে ভালো মানের জিপিইউ অ্যাড্রিনো ৬৫০, ৬৪০, ৬৩০; ম্যালি জি-৭৭, জি-৭৬ জি-৭২; পাওয়ার ভিআরের লেটেস্ট সিরিজ গুলো।স্মার্টফোন কেনার সময় যদি ভালো জিপিইউ সম্বলিত স্মার্টফোনটি কিনবেন কারণ পরবর্তীতে আপনি কিন্তু চাইলেও এতে কম্পিউটারের মতো ডেডিকেটেড জিপিইউ লাগাতে পারবেন না।

ক্যামেরা :

এখনকার স্মার্টফোনের ক্যামেরাগুলো আগের থাকে অনেক উন্নত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ক্যামেরার সংখ্যা ও বেড়েছে আগে মোবাইলের সামনে এবং পিছনে একটা ক্যামেরা দেখা যেত।তবে স্মার্টফোনের ক্যামেরা নিয়ে মানুষরে একটি ভুল ধারণা রয়েছে সবাই মনে করে স্মার্টফোনের ক্যামেরার রেজ্যুলেশন বা মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে স্মার্টফোনে তোলা ছবি ততো ভালো হবে।ছবি কতটা ভালো বা খারাপ হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে অ্যাপারচার, সেন্সর, লেন্স ইত্যাদির উপর ।এসব কারণে কম মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়েও সুন্দর ছবি পাওয়া সম্ভব। আর অ্যাপারচার যত কম হবে ক্যামেরা তত বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারবে।বর্তমানে স্মার্টফোন দিয়ে ৪কে রেজুলেশনেও বা ফুল এইচডি ভিডিও করা যায়।স্মার্টফোন কেনার সময় যাতে কমপক্ষে এইচডি রেজুলেশনে ভিডিও ক্যাপচার করা যায় এদিকেও লক্ষ্য রাখবেন।

র‍্যাম বা RAM :

র‍্যাম মোবাইলের অস্থায়ী মেমোরি হিসেবে কাজ করে।র‍্যাম প্রসেসরকে স্মুথলি কাজ করতে সাহায্য করে।যদিও র‍্যাম মোবাইলের অস্থায়ী মেমোরি তবে স্মার্টফোন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি।র‍্যাম বেশি হলে একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডেও রান করাতে পারবেন কোনো রকম সমস্যা ছাড়া ।বর্তমানে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোতে ৬ থেকে ৮ জিবি, মিডরেঞ্জর স্মার্টফোনগুলোতে ২ থেকে ৪ জিবি এবং লো-ইন্ড স্মার্টফোনগুলোতে ১ জিবি পর্যন্ত র‍্যাম পাওয়া যায়। র‍্যাম বেশি থাকার কারণে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।

মোবাইলের ব্যাটারি :

আপনার ব্যবহার করার নির্ভর করে আপনার মোবাইলের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কেমন দরকার ।কোননা আপনি যদি হেভি ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে ৪ হাজার মিলিএম্পিয়ার বা তার চেয়ে বেশি মিলিএম্পিয়ারের স্মার্টফোন নেওয়া উচিত ।এখন ৩ বা ৬ হাজার মিলিএম্পিয়ারের ব্যাটারি দেখতে পাওয়া যায়।কমপক্ষে ৩ হাজার মিলিএম্পিয়ারের ব্যাটারিসহ স্মার্টফোন নিতে রিকমেন্ড করবো।

ফাস্ট চার্জিং :

মোবাইল কিনার আগে দেখে নিন আপনার পছন্দ করা মোবাইলটিতে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির সাপোর্ট করবে কিনা।ফাস্ট চার্জিং মাধ্যমে আপনি খুব তাড়াতাড়ি মোবাইলের শক্তিশালী আর বড় ব্যাটারি চার্জ করতে পারবেন এতে আপনার অনেক সময় বেঁচে যাবে।তবে এখন অনেক মোবাইল গুলো ই ওয়ারলেস চার্জিং প্রযুক্তি সমর্থিত করে ।

রম বা স্টোরেজ :

স্মার্টফোনের স্থায়ী মেমোরি হিসেবে কাজ করে রম বা স্টোরেজ। অপারেটিং সিস্টেম ও এর অ্যাপস থাকে মূলত রমে এবং বাকি অংশে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল,ছবি গান ইত্যাদি সেভ করে রাখতে পারেন।তবে আমি আপনাকে রিকমেন্ড করবো কমপক্ষে ৩২ জিবি স্টোরেজের ফোন নিতে।আর এখন মোটামুটি সব মোবাইলে এ মাইক্রোএসডি বা মেমরি কার্ড স্লট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

অপারেটিং সিস্টেম :

কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের মতোই মূলত স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম । এখন বাজারের মোবাইল গুলোতে নানান ধরণের অপারেটিং সিস্টেম দেখা যায়। যেমন, Android OS, Apple’s IOS, Windows OS, Realme UI, MIUI, Colors ইত্যাদি । তবে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ওএস। এ ক্ষেত্রে লেটেস্ট ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম স্মার্টফোন নেয়াটাই ভালো।

রিভিউ ও রেটিং সাইট অনুসন্ধান :

ইন্টারনেট ব্যবহার আপনি সহজেই বিভিন্ন পপুলার রিভিউ ও রেটিং সাইটে বা ইউটিউব ভিজিট করে মোবাইলটির ভাল-মন্দ এবং খুঁটিনাটি জানতে পারবেন।স্মার্টফোন কেনার আগে এই বিষয় গুলো মাথায় রাখা দরকার ।

আরো পড়ুন:

ফ্রিল্যান্সিং কি? নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবে তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন ( A TO Z )

দেখে নিন স্মার্টফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা জরুরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *